শোক দিবস পালন করা সম্পূর্ণ নিষেধ
পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধীরা অস্বীকার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে একটা প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে থাকে। তারা বলে থাকে, “নবীজীর ইন্তিকালের দিবস হচ্ছে দুঃখের দিন, আর দুঃখের দিনে খুশি প্রকাশ করাটা অন্যায়!”
আসুন আমরা উক্ত বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাবটা লক্ষ্য করি–
শোক দিবস পালন করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
امرنا ان لا نحد علي ميت فوق ثلاث الا لزوج
অর্থ : আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা যেনো কারো ইন্তেকালে তিন দিন পর আর শোক প্রকাশ না করি। তবে স্বামীর জন্য স্ত্রী চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে।”
[বুখারী শরীফ; মুসলিম শরীফ; মুয়াত্তা মালিক শরীফ; আবু দাউদ শরীফ; নাসায়ী শরীফ; তিরমিযী শরীফ; ইবনে মাজাহ শরীফ; দারেমী শরীফ; মিশকাত শরীফ]
অতএব, শরীয়তের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমান হলো কারো পক্ষে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ এর দিন ১২ই রবীউল আওয়াল শরীফকে শোকের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়!!
বিলাদাত শরীফ এবং বিছাল শরীফ উভয়ই কল্যাণময়। দলীল
** পবিত্র কুর’আন থেকে
১. যেমন, আল্লাহ পাক হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে ইরশাদ করেন ,
وسلم عليه يوم ولد و يوم يموت ويوم يبعث حيا
অর্থ : উনার প্রতি সালাম (শান্তি), যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হবেন!”
[সূরা মারইয়ম ১৫]
২. অনুরুপ হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেটা তিনি নিজেই বলেন-
والسلم علي يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا
অর্থ : আমার প্রতি সালাম বা শান্তি যেদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যেদিন আমি বিছাল শরীফ লাভ করি, যেদিন পুনুরুত্থিত হবো!”
[সূরা মারইয়াম ৩৩]
** হাদীস শরীফ থেকে
১.
عن ابن مسود رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي عليه و سلم حياتي خير لكم و مماتي خير لكم
অর্থ : আমার হায়াত-বিছাল (ইন্তেকাল) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ বা উত্তম বা খায়ের বরকতের কারন !””
[কানযুল উম্মাল শরীফ; শিফা শরীফ ২য় খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা]
উক্ত হাদীস শরীফে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই বলতেছেন, উনার বিছাল শরীফ এর দিনও কল্যাণময়!
আদম আলাইহিস সালাম যে দিন বিছাল লাভ করেছেন সেই শুক্রবার দিনটিকেই ঈদ বলা হয়েছে
দলীলঃ-
১.
ان من افضل ايامكم يوم الجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থ : তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে, জুমুয়ার দিন। এদিনে আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এদিনেই তিনি বিছাল বা ইন্তেকাল লাভ করেন!
[সহীহ নাসায়ী শরীফ -জুমুয়ার অধ্যায়]
২. অতপর এই জুমুয়ার দিন ঈদের দিনকেই ঘোষনা করে ইরশাদ হয়-
ان هذا يوم جعله الله عيدا
অর্থ :এ জুমুয়ার দিন হচ্ছে এমন একটি দিন, যেদিনকে আল্লাহ পাক ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন!”
[সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ; মুসনাদে আহমদ শরীফ; মিশকাত শরীফ – জুমুয়ার অধ্যায়]
উক্ত হাদীস শরীফ থেকে প্রমানিত হলো জুমুয়ার দিন আল্লাহ পাক উনার নবী এবং রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ এর দিন হওয়ার সত্ত্বেও আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সে দিনটিকে উত্তম দিন হিসাবে নিদৃষ্ট করে দিয়েছেন! এবং স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে জুমুয়ার দিনকে ঈদের দিন বলে ঘোষনা দিয়েছেন!
এখন বিরোধীতাকারীরা কি বলবে যে, আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছাল শরীফের দিন ঈদ পালন করতে বলে অন্যায় করেছেন?? তারা কি আল্লাহ পাক এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বেশী বুঝে??
নাউযুবিল্লাহ মিন জালিক!!
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মাণ হল, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন এবং বিছাল শরীফ উভয়ই খুশি বা ঈদের দিন! যারা শোকের বা কষ্টের দিন বলবে তারা কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফ এর বিরোধীতা করল।
তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে, নবী আলাইহিস সালাম গণ আমাদের থেকে পর্দা করছেন মাত্র। উনারা উনাদের রওজা মোবারকে বিশ্রাম করছেন এবং আল্লাহর রিজিক প্রাপ্ত হচ্ছেন। উনারা রওজায় আল্লাহর জিকির এবং নামাজ দ্বারা ইবাদাত এ মসগুল থাকেন।
‘হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নবীরা কবরে জীবিত। আর তারা সেখানে নামায পড়েন।‘
[মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৮৮৮, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫, সহীহ কুনুযুস সুন্নাতির নববিয়্যাহ, হাদীস নং-২২]
আল্লাহ তা’আলা আমাদের খুশি হতে বলেন,
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَ بِرَحْمَتِهِ فَبِذَالِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَا خَىْرٌ مِمَّا ىَجْمَعُوْنَ
আর্থাৎ- “হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর “অনুগ্রহ” ও “রহমত” প্রাপ্তিতে তাঁদের মুমিনদের খুশি উদযাপন করা উচিত এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট”।
[সুরা ঈউনূছ,আয়াত ৫৮]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, এখানে আল্লাহ এর “অনুগ্রহ” দ্বারা ইলমে দ্বীন এবং “রহমত” দ্বারা নবী কারীম (সাঃ) এর কথা বুঝানো হয়েছে।
[আদ্দুররুল মনসূর পৃঃ ৩৩০; তাফসীর রুহুল মা’আনী ১১তম খন্ড, পৃঃ ১৮৩]
সুতরাং আলোচ্য আয়াত এবং তাফসীরের মাধ্যমে বুঝা গেল, মিলাদুন্নাবী বা রাসূল (সাঃ) এর দুনিয়ায় শুভাগমনের কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজে আমাদের আনন্দ উৎসব করার আদেশ দিয়েছেন। আর মিলাদুন্নাবী বা রাসূল (সাঃ) এর আগমন উপলক্ষে আনন্দ-উতসব বা খুশী উদযাপন করার নামই হল পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাঃ)।
শুধুমাত্র ইবলিশ শয়তান জীবনে নূর নবীজীর ﷺُ দুনিয়াতে আগমনের সময়টাতেই খুব বেশি কেঁদেছে বা আফসোস/হা-হুতাশ করেছে।
أن إبليس رن أربع رنات حين لعن وحين أهبط وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وحين أنزلت الفاتحة
১. আল্লাহ যখন তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেন,
২. যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করা হল,
৩. নূর নবীজীর ﷺُ দুনিয়াতে আগমনের সময় এবং
৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হবার সময়
[সূত্রঃ ইবন কাসির, আল আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ১৬৬]
সুতরাং যারা বলে খুশি প্রকাশ করতে না, তারা বুঝে বা না বুঝে অথবা জেনে বা না জেনে কাদের কাতারে পড়ছে আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ তা’আলা তাদের সুবুদ্ধি দান করুন। তাই আখেরী রসূল, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকে নিয়ামত মনে করে উক্ত দিনকে ঈদ পালন করতে হবে।
(সংগৃহীত)